কাটাওয়ে লেখক
বরফের পর্বত জয়
মেঘ বরফের সান্নিধ্যে ক’দিন : শেষ পর্ব
লতিফুল হক মিয়া | ১:২২ অপরাহ্ন, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
কাটাওয়ে বরফ উদযাপন
মেঘ বরফের সান্নিধ্যে ক’দিন :: ষষ্ঠ পর্ব এর পরের অংশ
১৬ ডিসেম্বর আমরা ঘুম থেকে উঠলাম ভোর ৫টার দিকে। কর্মাকে ডেকে তুললাম। এরপর ৬টার দিকে প্যাকেজের ভিতরেই নাস্তা করালেন কর্মা। নাস্তাতে ছিলো ব্রেড ও দুধ চা। তাপমাত্রা মাইনাসের নীচে হওয়ায় লাইনে পানি বরফ হয়ে গিয়েছিলো। তাই সকালে আমরা খাবার পানি পাইনি।
ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৪ হাজার ফুট উপরে বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছেন লেখক।
এরপর কর্মা আমাদের জানালেন অত্যন্ত তুষারপাতের কারণে ইয়ংথান ভ্যালির রাস্তা বন্ধ। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কোনো পর্যটককেই যাবার অনুমতি দিচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা ‘কাটাও’ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। সকাল ৮টার দিকে শুরু হলো কাটাও যাত্রা। রাস্তার দু’ধারে বরফের মাঝ দিয়ে চলছে আমাদের জিপ।
উত্তর সিকিমের কাটাওয়ে নারী সহযাত্রীরা।
বাইরে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। তিন থেকে চারটি করে মোটা কাপড় পড়ে শীত মোকাবেলার প্রস্তুতি প্রত্যেকের। ঘরের চালে বরফ। গাছে বরফ। কোথাও কোথাও রাস্তার উপরও বরফের স্তুপ। এমন চিত্রকে অনেকেই সুইজারল্যান্ডের সঙ্গেও মিল করেছেন। লাচুং থেকে কাটাও’য়ের দুরুত্ব ২৫ কিলোমিটার। ৯টার দিকে আমরা পৌঁছলাম কাটাও।
বরফের সঙ্গে সেলফি তুলছেন লেখক।
গাড়ি থেকে নেমেই সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন ছবি তুলতে। শীতে জমে যাওয়ার মতো অবস্থায় হাত মোজা খুলে বেশিক্ষণ ছবি তোলাও বেশ কঠিন হচ্ছিল। আবার কেউ কেউ শীত থেকে বাঁচতে কিছুক্ষণ গাড়িতেও বসলেন। প্রায় ১৪ হাজার ফুট উপরের ভ্রমণ স্থান হলো এটি।
বরফময় কান্দা ঝর্ণায় লেখক।
তাই নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল সবার। চারপাশের দৃশ্যগুলো দেখে সবাই মুগ্ধ। এত কষ্ট করে আসাটা যেন সার্থক হলো সবার। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবসে আমিও সেখানে উঠালাম বিজয়ের পতাকা। বরফময় পর্বতে সূর্য্যমিামার আলোর ঝলকানি পর্বতকে অনেক রূপবতী করে তুলেছে।
বরফময় উপতক্যায় লাফালাফি
এমন অপার্থিব দৃশ্য সম্ভবত মিলবে শুধুমাত্র কাটাও’য়েই। প্রচন্ড শীতে দুই ঘণ্টা সময় ব্যয় করার পর আমরা ফিরতে শুরু করলাম লাচুংয়ের দিকে। ১২টার দিকে লাচুংয়ে ফিরে আসলাম। লাচুংয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে রওনা দিলাম গ্যাংটকের দিকে। আসার পথে ‘সেভেন ফলস’-এ যাত্রা বিরতি দিলেন আমাদের গাইড কাম জিপ চালক কর্মা। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফিরলাম হোটেলে। এরপর বেড়িয়ে পরলাম রাতের খাবার আর কেনাকাটা করতে।
বরফময় উপতক্যাং সহযাত্রীরা।
গ্যাংটকে ও রাত সাড়ে ৮টার পর সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। তাই দ্রæত কেনাকাটা ও মুসলিম হোটেলে রাতের খাবার খেয়ে ফিরলাম হোটেলে। দ্রæতই ঘুমিয়ে পড়লাম কারণ পরের দিন রওনা দিবো ঢাকার উদ্দেশ্যে।
উত্তর সিকিসমের কাটাওয়ে সহধর্মিনীর সঙ্গে লেখক
উত্তর সিকিসমের কাটাওয়ে সহধর্মিনীর সঙ্গে লেখক
১৭ ডিসেম্বর সকাল ৭টার দিকে আমরা সবাই প্রস্তুত হলাম। প্যাকেজের নির্ধারিত অর্থ হোটেলে পরিশোধ করা হলো। এদিন শিলিগুড়ি যাবার গাড়ি অপেক্ষা করছিল হোটেলের নিচেই। লাগেজগুলো উপরে ক্যারিয়ারে তোলা হলো। সোয়া ৭টার দিকে শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু হলো। ফেরার পথে রংপোতে পাসপোর্টে প্রস্থান সিল দেওয়া হলো। এরপর আরেকটি স্থানে যাত্রাবিরতি দিলো গাড়ি চালক। সেখান থেকে টিমের অনেকেই পাহাড়ি কমলা কিনলেন। এরপর শুরু হলো আবারো যাত্রা। ১২টার দিকে আমরা পৌঁছলাম শিলিগুড়ির এসএনটি টার্মিনালে। গাড়ি থেকে সকালের নাস্তা করলাম সবাই।
উত্তর সিকিমের কাটাওয়ে মাইনাস ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বরফ হাতে লেখক।
ওখান থেকে বোনসহ রানা ভাই গেলেন কলকাতার দিকে। বিশ্বজিৎ থেকে গেল ভারতে। হালকা কিছু কেনা-কাটা করে টিমের বাকী ছয় জনকে নিয়ে ১টার দিকে রওনা হলাম চ্যাংড়াবান্দার দিকে। ১ হাজার ২০০ রুপি জিপ ভাড়ায় সাড়ে তিনটার দিকে পৌঁছলাম চ্যাংড়াবান্ধায়। ওখানে ফেরার পথে ভারতে পুনরায় জনপ্রতি ৫০ রুপি দিতে হলো উৎকোচ। পাসপোর্টে প্রস্থান সিলের জন্য ধরতে হলো লাইন। এরপর রুপি থেকে টাকা করে গেলাম বাংলাদেশে দিকে। বাংলাদেশে দিতে হলো আবার জনপ্রতি ১৫০ টাকা করে উৎকোচ। বাংলাদেশে পৌঁছে বাংলাদেশে ইমিগ্রেশনে প্রস্থান সিল দেওয়া হলো। এরপর গেলাম ঢাকার টিকিট সংগ্রহে। বিকাল ৫টা অতিক্রম করায় একসাথে ৬টি টিকিট আর পাওয়া গেল না। ডাবল দামে এক সাথে ৩টি টিকিট কেটে ১৮ ডিসেম্বর ১১টার দিকে ঢাকায় পৌঁছলাম আমরা। মাথাপিছু ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ঘুরে এলাম এক অপার্থিব শান্তি আর সৌন্দর্য্য উপভোগ করে।
আরও পড়ুন: প্রথম পর্ব, দ্বিতীয় পর্ব, তৃতীয় পর্ব, : চতুর্থ পর্ব, পঞ্চম পর্ব, ষষ্ঠ পর্ব এবং শেষ পর্ব