
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (আইআইএসসি), বেঙ্গালুরু
ভারতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় এবং মর্যাদাপূর্ণ উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ১৯০৯ সালে জামশেদজি টাটার সক্রিয় সমর্থনে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং একসময় এটি "টাটা ইনস্টিটিউট" নামে পরিচিত ছিল।
আইআইএসসি বিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণার জন্য বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত। এটি ভারতে গবেষণার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়।
এটি এনআইআরএফ র্যাঙ্কিং-এ ভারতের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রায়শই শীর্ষস্থানে থাকে। এছাড়াও, আন্তর্জাতিকভাবে কিউএস এবং টাইমস হায়ার এডুকেশন র্যাঙ্কিং-এ এর অবস্থান বেশ ভালো।
বিদ্যালয়টি প্রধানত স্নাতকোত্তর এবং ডক্টরাল গবেষণার সুযোগ প্রদানের জন্য পরিচিত, যা আইআইটি-র মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনেক ক্ষেত্রেই ছাড়িয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ভারতের বহু নতুন প্রতিষ্ঠান ও কর্মসূচির প্রতিষ্ঠা এবং নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
এই প্রতিষ্ঠানে মহাকাশ, পারমাণবিক প্রযুক্তি, কম্পিউটার বিজ্ঞান, উন্নত উপকরণ, ন্যানোটেকনোলজি এবং টেকসই শক্তির মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে গভীর গবেষণা করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন আউটরিচ প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিল্প এবং সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। এর মধ্যে শিল্প-সহযোগিতামূলক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত।
প্রতিষ্ঠানটি তার বিশাল, মনোরম এবং সবুজ ক্যাম্পাসের জন্য পরিচিত, যেখানে বিশ্বমানের গবেষণা সুবিধা, সুসজ্জিত পরীক্ষাগার এবং লাইব্রেরি রয়েছে।
জওহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটি (জেএনইউ), নয়াদিল্লি
ভারতের একটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ সরকারি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, যা ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, মানববিদ্যা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চমানের গবেষণা ও শিক্ষার জন্য বিখ্যাত।
ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর নামে বিশ্ববিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয়। এনআইআরএফ র্যাঙ্কিংয়ে এটি সাধারণত ভারতের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে থাকে। প্রায় ১০০০ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের জন্য মনোরম ও সবুজে ভরা পরিবেশ রয়েছে। এখানে অত্যাধুনিক শ্রেণীকক্ষ, লাইব্রেরি এবং পরীক্ষাগার রয়েছে। জেএনইউ তার বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতা, রাজনৈতিক বিতর্ক এবং শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য পরিচিত, যা প্রায়শই জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। বিভিন্ন স্কুল এবং বিশেষ কেন্দ্রে পিএইচডি সহ গবেষণামূলক প্রোগ্রামের জন্য জেএনইউ সুপরিচিত। অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জী (নোবেল বিজয়ী) সহ বহু স্বনামধন্য ব্যক্তি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত ছিলেন। রোমিলা থাপারের মতো প্রখ্যাত ইতিহাসবিদও এখানে অধ্যাপনা করেছেন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্সের জন্য মূলত কমন ইউনিভার্সিটি এন্ট্রান্স টেস্ট (CUET) এর মাধ্যমে ভর্তি করানো হয়।
জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, নয়াদিল্লি
ভারতের একটি অত্যন্ত সুপরিচিত কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, যা শিক্ষাক্ষেত্রে তার স্বতন্ত্র অবস্থান এবং ইতিহাসের জন্য উল্লেখযোগ্য। ১৯২০ সালে এটি আলিগড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ শাসনের অসহযোগ আন্দোলনের সময় জাতীয়তাবাদী নেতা এবং আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের দ্বারা এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা ও দেশপ্রেম বৃদ্ধি করা। ১৯২৫ সালে এটি দিল্লির কারোলবাগে স্থানান্তরিত হয় এবং পরবর্তীতে ১৯৩৫ সালে ওখলায় বর্তমান ক্যাম্পাসে স্থান পায়। ১৯৮৮ সালে ভারতীয় সংসদের একটি আইন দ্বারা এটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পায়।
সাম্প্রতিক এনআইআরএফ (National Institutional Ranking Framework) র্যাঙ্কিংয়ে, এটি ভারতের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রায়শই তৃতীয় স্থান অধিকার করে। বিজ্ঞান, কলা, বাণিজ্য এবং প্রকৌশলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চমানের শিক্ষা ও গবেষণার জন্য পরিচিত। ২০১১ সালে এটি একটি সংখ্যালঘু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করে। এটি দিল্লির জামিয়া নগর, ওখলাতে অবস্থিত এবং ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে জামিয়া নগর মেট্রো স্টেশনও রয়েছে। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া তার অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহু-সংস্কৃতির পরিবেশের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত, যা এটিকে ভারতের শিক্ষাজগতে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।
মনিপাল অ্যাকাডেমি অফ হায়ার এডুকেশন, মনিপাল, কর্ণাটক
কর্ণাটকের মনিপালে অবস্থিত মনিপাল অ্যাকাডেমি অফ হায়ার এডুকেশন (MAHE) একটি স্ব-অর্থায়নকারী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ডিম্ড বিশ্ববিদ্যালয়। এটি ভারত সরকারের দ্বারা "ইনস্টিটিউশন অফ এমিনেন্স" হিসেবে স্বীকৃত। প্রতিষ্ঠানটি তার বিশ্বমানের শিক্ষা, গবেষণা, এবং পরিকাঠামোর জন্য সুপরিচিত।
১৯৫৩ সালে ড. টি.এম.এ. পাই কর্তৃক এটি প্রতিষ্ঠিত হয়, যিনি কস্তুরবা মেডিকেল কলেজ স্থাপনের মাধ্যমে এর সূচনা করেন। ১৯৯৩ সালে এটি একটি ডিম্ড বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। সাম্প্রতিক NIRF র্যাঙ্কিংয়ে এটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাটাগরিতে ভারতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে স্থান পেয়েছে। এটি QS এবং টাইমস হায়ার এডুকেশন (THE) এর মতো আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়েও ভালো অবস্থান অর্জন করেছে।
স্বাস্থ্য বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ব্যবস্থাপনা, মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান এবং উদার শিল্পকলাসহ ৩০টিরও বেশি বিভাগে ৪০০টিরও বেশি কোর্স অফার করে। MAHE সকল বিভাগে নিরন্তর গবেষণা এবং উদ্ভাবনের উপর জোর দেয়। তাদের ফ্যাকাল্টিতে রয়েছে শিক্ষকতা, গবেষণা এবং শিল্প-সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা। ৬০টিরও বেশি দেশের ৩৫,০০০-এরও বেশি শিক্ষার্থী এই ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করে, যা একটি বহু-সাংস্কৃতিক পরিবেশ তৈরি করে। আরব সাগরের উপকূলরেখা এবং পশ্চিমঘাট পর্বতমালার কাছাকাছি অবস্থিত একটি মনোরম এবং শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাসে এটি অবস্থিত। এখানে অত্যাধুনিক শ্রেণীকক্ষ, ল্যাবরেটরি, হাসপাতাল এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। শিল্প এবং সমাজের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে, যার মধ্যে শিল্প-সহযোগিতামূলক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত। সাত্য নাদেলা (মাইক্রোসফটের সিইও) এবং রাজীব সুরি (নোকিয়ার প্রাক্তন সিইও)-এর মতো বহু বিখ্যাত ব্যক্তি এই প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি (বিএইচইউ), বারাণসী, উত্তর প্রদেশ
ভারতের উত্তর প্রদেশের বারাণসীতে অবস্থিত বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি (বিএইচইউ) একটি মর্যাদাপূর্ণ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, যা শিক্ষাক্ষেত্রে তার সমৃদ্ধ ঐতিহ্য এবং অবদানের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। ১৯১৬ সালে মহান জাতীয়তাবাদী নেতা পণ্ডিত মদন মোহন মালব্য এটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞান এবং সংস্কৃতির সাথে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে শিক্ষা প্রদান ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য। অ্যানি বেসান্ত এবং আরও কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সহযোগিতায় বিএইচইউ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিএইচইউ এশিয়ার বৃহত্তম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম, যা প্রায় ১৩৭০ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। প্রতিষ্ঠানটি প্রাচ্য, ধ্রুপদী, আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি—সব ধরনের শিক্ষায় গবেষণা ও শিক্ষাদান করে। এটি সংসদের একটি আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং ভারত সরকার কর্তৃক অর্থায়িত একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান।
বিএইচইউ তার মনোরম এবং সবুজ ক্যাম্পাসের জন্য পরিচিত, যা শিক্ষণের জন্য একটি শান্ত এবং অনুপ্রেরণামূলক পরিবেশ তৈরি করে। প্রতিষ্ঠানটির নকশা ও স্থাপত্য পরিকল্পনা চমৎকার, যেখানে চারটি অর্ধবৃত্তাকার কাঠামো একে অপরের উপর স্থাপিত, যার মধ্যে ভিতরের দিকে গবেষণা কেন্দ্র এবং বাইরের দিকে অনুষদগুলো অবস্থিত। এখানে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (বিএইচইউ) এর আওতায় সিরামিক, কেমিক্যাল, সিভিল, কম্পিউটার, ইলেকট্রিক্যাল এবং অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ রয়েছে। এটি বারাণসীর দক্ষিণ প্রান্তে, গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত।