
শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুপ্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্য উপদেষ্টা, কমিশনের সদস্য, রাজনৈতিক দল ও অতিথিরা অংশ নেন। প্রেস উইং জানায়, মোট ২৫টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি কার্যকর হয়েছে। পাশাপাশি, কিছু বড় দল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেয়নি বা তাদের অনুপস্থিতি ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছিল।
অংশ নেওয়া ২৫ দল: তালিকা ও প্রতিনিধিত্ব
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের তথ্য অনুযায়ী, নিম্নলিখিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন:
লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) — মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য নেয়ামূল বশির
খেলাফত মজলিস — আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন — প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম ও মিডিয়া সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন
আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) — চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ
নাগরিক ঐক্য — সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) — চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ও মহাসচিব মোমিনুল আমিন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) — মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস — সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী — কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার
গণসংহতি আন্দোলন — প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) — সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও সিনিয়র সহসভাপতি তানিয়া রব
গণ অধিকার পরিষদ (জিওপি) — সভাপতি নুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি — সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য বহ্নিশিখা জামালী
জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট / এনপিপি / জাগপার — ফরিদুজ্জামান ফরহাদ (সমন্বয়ক) ও খন্দকার লুৎফর রহমান (জাগপার)
১২‑দলীয় জোট — মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ — প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রফেসর আশরাফ আলী আকন ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান
গণফোরাম — ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান
জাকের পার্টি — ভাইস চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ভুইয়া ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হাসান শেখ
জাতীয় গণফ্রন্ট — কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস ও সদস্য মঞ্জুরুল আরেফিন লিটু বিশ্বাস
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি — সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারী ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার
বাংলাদেশ লেবার পার্টি — চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম
ভাসানী জনশক্তি পার্টি — চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম (বাবলু) ও মহাসচিব মোহাম্মদ আবু ইউসুফ (সেলিম)
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ — সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী ও মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী
ইসলামী ঐক্যজোট — চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল কাদের ও মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী
আমজনতার দল — সভাপতি (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক মো. তারেক রহমান
স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বর্জনকারী বা অংশ না নেওয়া ৫টি দল হল:
এই দলগুলোর প্রতিনিধিরা আনুষ্ঠানিকভাবে সনদে স্বাক্ষর করেছেন এবং সংশ্লিষ্ট কপি তুলে ধরেছেন।
অনুপস্থিত কিছু দল ও সেই কারণ
যদিও ২৫ দল উপস্থিত ছিলেন, কিছু রাজনৈতিক দল অনুষ্ঠানে অংশ নিতে প্রত্যাখ্যান করেছে। উল্লেখযোগ্য কিছু দল হলো:
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) — দলটি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ না নেবার কথা জানিয়েছে এবং যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে, “এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠান কোনো আইনি ভিত্তি নেই, এটি একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।”
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) — সিপিবিসহ বামধারার চার দল ঘোষণা করেছে যে তারা জনসাধারণকে স্বাধীনতার ঘোষণা বাদ দেওয়া প্রস্তাবের কারণে সনদে স্বাক্ষর করবেন না।
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) — সিপিবিসহ বাম দলগুলোর মধ্যে বাসদও ছিল ঘোষণা করা যে তারা স্বাক্ষরে যোগ দেবে না।
বাসদ (মার্ক্সবাদী) — একই কারণে অনুষ্ঠান অনুপস্থিত ছিল।
বাংলাদেশ জাসদ (বাম) — জাসদও বাম জোটের সদস্য হওয়ায় অনুষ্ঠানে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ হলো একটি উচ্চ-আলোচিত দলিল, যা রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বহু ধাপে আলোচনার ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে।
শুরুতে ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটকে খসড়া পাঠানো হয়। অবশেষে চূড়ান্ত প্রক্রিয়ায় ২৫টি দল অনুষ্ঠানে অংশ নেয়।
স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পূর্বেই এনসিপি ও বাম পার্টিগুলো অংশ না নেয়ার ঘোষণা করেছিল, কারণ তারা দাবি করেছিল যে, স্বাক্ষর করার আগে সনদ ও তার আইনি প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করা উচিত।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, ৮৪টি দফার সংস্কারসহ চলমান দলিলের অনেক দিক নিয়ে আলোচনা ও বিরোধ ছিল।
অনুষ্ঠানটি বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয়।
স্বাক্ষরকালে রাজনৈতিক নেতারা সনদের কপি তুলে ধরেন এবং সংশ্লিষ্ট অঙ্গীকার প্রকাশ করেন।
এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠান রাজনৈতিক সংকেত হিসেবে গুরুত্ব বহন করে। ২৫টি দলের অংশগ্রহণ দেখায় যে, একটি বড় অংশ সংশ্লিষ্ট দলগুলো এই উদ্যোগকে গ্রহণ করেছে।
অনুষ্ঠানের ফলাফল এবং রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ভবিষ্যতের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। স্বাক্ষরের ফলে নতুন ধরনের রাজনৈতিক চুক্তি ও সমঝোতার পথ প্রসারিত হতে পারে। তবে, সনদের বাস্তবায়ন ও কার্যকরী পর্যায়ে কী দিক নেবে, সেটিই এখন অপেক্ষার বিষয়।